গত বুধবার সকালে শ্যামলী ছায়াতল বিদ্যাপীঠে কথা হয় সংগঠনের পরিচালক বি. এম. সোহেল রানার সঙ্গে। কীভাবে এই স্কুলের যাত্রা শুরু জানতে চাইলে তিনি বলেন, সালটা ছিল, ২০১৬। মার্চ মাসের কথা, আমার মন খারাপের কারণে শ্যামলী পার্কে বসেছিলাম। ক’জন শিশু মাঠে বোতল টোকাচ্ছিল। তারা এসে বললো—‘মামা কিছু খাইতে দেন’। আমি বললাম, খাবার দিতে পারি, যদি তোমরা পড়ালেখা করো। তোমরা তোমাদের নাম লিখতে পারো? আমি তোমাদের নাম লেখা শেখাতে পারি।’
ওই মুহূর্তে আমার সঙ্গে থাকা একটা নোটবুক ছিল, কলম ছিল, তা দিয়ে ওদের নাম লিখে দেখাচ্ছিলাম। ওদের একজনার নাম ছিল ‘রাকিব’। সে একবার ‘বাকিব’ লিখছিল, কখনো ‘রাকব’ লিখছিল। আর একটা বাচ্চার নাম ছিল ‘নদী’। সে কখনো ‘নদ’ লিখছিল কখনো ‘নীদ’ লিখছিল। তবে ওরা ভুলভাল লিখলেও শিখতে তাদের আগ্রহের কমতি ছিল না। এটা আমাকে অনুপ্রাণিত করলো। তারপর আমি ওদের ঝালমুড়ি কিনে খাওয়ালাম এবং বললাম, তোমরা কাল এ সময় এখানে এসো ‘আমি তোমাদের আবার শেখাবো’। পরের দিন ওরা ঠিকই আসলো এবং আরো ক’জন শিশুকে সঙ্গে আনলো। এভাবেই কখন যে ওদের শেখানোর কাজে জড়িয়ে পড়েছিলাম বুঝতে পারিনি।
সে সময় কিছু মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ওই শ্যামলী মাঠে আসতো। ওরা আমার শেখানো দেখে বললো—‘ভাই আপনি একা একা কষ্ট করছেন, এভাবে তো পরিবর্তন সম্ভব নয়, আসেন আমরা সবাই মিলে কিছু একটা করি। আমরা একদিন সবাই বসে ঠিক করলাম একটা সংগঠন করি, সেটার ব্যানারে আমরা শিশুদের লেখাপড়া শেখাবো। যেই কথা, সেই কাজ, সংগঠন তৈরি হলে। যার নাম হলো ‘ছায়াতল বাংলাদেশ।’ এইভাবে শুরু হলো সংগঠন।
২০১৬ সালে আমরা পার্কেই পাটিতে বসে শিশুদের শেখাতাম। তখন ৩৫ জন শিশু ছিল। ২০১৬ সালের শেষের দিকে ‘নীড়’ লিমিটেডের চেয়ারম্যান স্থপতি মো. মোবাশ্বের হোসেন স্যার আসলেন আমাদের শিশুদের লেখাপড়া শেখানো দেখতে। তিনি বললেন, সামনে তো বর্ষাকাল, তোমাদের অফিস লাগবে। তোমরা একটা বাসা খোঁজ, ভাড়া আমি দিব। এখন আমরা বাচ্চাদের অফিসে পড়াই, আর নীড় লিমিটেড আমাদের অফিস ভাড়া দেয়। তবে মাঝে মাঝে আমরা পার্কের মাঠে শিশুদের খেলাধুলা, গান, মেডিক্যাল ক্যাম্প করি।